নিরাপদ রথযাত্রা উপহার দিতে বাঁশ দিয়ে তৈরি হল রথ, ব্যতিক্রম এই উদ্যোগ কাতলামারায়
বহু জায়গায় কাঠের পরিবর্তে লোহার রথ নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ পরিবাহী তারের সংস্পর্শে এসে ঘটেছে বহু দুর্ঘটনা। এবার সেই জায়গা থেকে সরে এসে সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং টেকসই বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হলো রথ। শৈল্পিক ছোঁয়ায় নির্মিত এই রথের মাধ্যমে সিমনার কাতলামারায় কাঠিয়াবাবা মন্দিরে বিগত ৫ বছর যাবত অনুষ্ঠিত হচ্ছে রথযাত্রা উৎসব।

দ্যা ফ্যাক্ট :- আদি কাল থেকে কাঠের তৈরি রথে জগন্নাথ দেবকে নিয়ে যাওয়া হয়। সময়ের সাথে সাথে কাঠের যুগানে ভাঁটা দেখা গেছে। নির্মাণ করা হয়েছে লোহার রথ। আর এই লোহার রথকে কেন্দ্র করে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে বহু ভক্তপ্রাণ মানুষ অকালে প্রয়াত হয়েছেন। সেই বিভীষিকাময় পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে বাঁশকে কাজে লাগিয়ে সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং টেকসই রথ তৈরি করলেন ত্রিপুরার কাতলামারা গ্রামের মান্না রায়। কাঠিয়া বাবা আশ্রম থেকে বিগত পাঁচ বছর যাবত এই বাঁশের তৈরি রথে বসেই যাত্রা করছেন জগন্নাথ দেব।
২০২৩ সালে ত্রিপুরার কুমার ঘাটে উল্টো রথকে কেন্দ্র করে বৈদ্যুতিন তারের সংস্পর্শে ভয়াবহ দুর্ঘটনার স্মৃতি এখনো তাজা। সময়ের সাথে প্রয়োজনের নিরিখে কাঠের বিকল্প হিসেবে লোহার রথ বেছে নিয়েছিল মানুষ। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে বিকল্প পথ দেখাচ্ছে কাতলামারার কাঠিয়া বাবা আশ্রম। বিগত পাঁচ বছর যাবত এই কাঠিয়া বাবা আশ্রম থেকে বাঁশের তৈরি রথের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হচ্ছে রথযাত্রা উৎসব। এই বছরও বাঁশের তৈরি রথেই বসানো হয়েছে জগন্নাথ দেবকে। মূলত বাঁশ গ্রামের প্রতিষ্ঠাতা মান্না রায় তৈরি করেছেন বাঁশের এই রথ। তিনি জানান স্থানীয় বাঁশকে কাজে লাগিয়ে এবং স্থানীয় কারিগর দিয়ে এই রথ নির্মাণ করা হয়েছে। রথের কাজে ব্যবহৃত বাঁশ ম্যানুয়াল ট্রিটমেন্ট করে ব্যবহার করা হয়েছে। যার ফলে এই বাঁশের আয়ুষ্কাল অনেক বেড়ে গেছে। এই বাঁশ গুলো ট্রিটমেন্ট করার কারণে দীর্ঘদিন অক্ষত অবস্থায় থাকবে। তিনি জানান ইতিমধ্যেই এই রথের বয়স পাঁচ বছর হয়ে গেছে। আরো বহুদিন অক্ষত অবস্থায় চলবে এই রথ। বর্তমানে কাঠের পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে এই রথ তৈরি করায় সংরক্ষণ হচ্ছে গাছ। অন্যদিকে লোহার বিকল্প হিসেবে এই রথ সম্পূর্ণ নিরাপদ। নিজেদের প্রয়োজন মত এই রথের উচ্চতা এবং প্রস্থ বৃদ্ধি করা যাবে বলে জানিয়েছেন মান্না রায়। ফলে কোন কারণবশত এই রথ বিদ্যুৎ পরিবাহিতারের সংস্পর্শে এলেও কোন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে না। ত্রিপুরার প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে মান্না রায়ের এই উদ্যোগ হতে পারে একটি বিকল্প দিশা। যেভাবে রথযাত্রা উৎসবকে কেন্দ্র করে দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এবং কাঠের যথেষ্ট সংকট দেখা যাচ্ছে সেই জায়গায় বাঁশের তৈরি এই রথ একেবারেই সময়োপযোগী। মান্না রায়ের দাবি যদি কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি বাঁশ দিয়ে রথ তৈরি করতে উনার সহযোগিতা চান তাহলে তিনি সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত। এখন প্রয়োজন নিরাপদ এবং টেকসই বাসের রথ তৈরিতে উদ্যোগ গ্রহণ করার।
What's Your Reaction?






